Saturday, 31 July 2021

বর বউয়ের বিবাদ




শুভময়ের আজ সকালে ভীষণ জরুরী মিটিং | সাড়ে নটা র ভিতর অফিস ঢুকতেই হবে | স্নানে যাবার সময় হয়ে এল,কিন্তু যেতে পারছে কই | কাজের সময় মোবাইলটি খুঁজে পাচ্ছে না তার মধ্যে শ্বশুর মশায় আর শাশুড়ি মা, সাত সকালে এসে হাজির একই পাড়ায় প্রেম ঘটিত বিয়ে তার আর সঞ্চিতার শ্বশুর বাড়ি হেঁটে পাঁচ মিনিটের রাস্তা | শ্বশুর মশায় ব্যাঙ্কে চাকরি করতেন,এখন অবসর নিয়েছেন,আর শাশুড়ি মা হলেন ডাক্তার, গাইনোকোলজিস্ট| সাংঘাতিক দাপুটে মহিলা | ওনাদের দু জনেরই দৃঢ় বিশ্বাস, মেয়ের সম্বন্ধ করে বিয়ে দিলে অনেক ভাল জামাই পাওয়া যেত | তাই কথা বার্তায় একটা খোঁচার আভাস পাওয়া যায় | শুভময়ের বাবা,মা এখন দিল্লীতে,শুভময়ের দিদির কাছে গেছে, তাই ওনাদের যাওয়া আসাটাও বেড়েছে | শ্বশুর মশায় বললেন "কি হে কি খুঁজছো এত তন্ন তন্ন করে "?"না, আসলে ফোনটা কোথায় যে রাখলাম" | "ফোন কি সাইলেন্ট মোডে রাখা "? এই সব প্রশ্ন এই সময় ভালো লাগে কারুর?তাও মাথা ঠান্ডা রেখে বললো "না সাইলেন্ট এ রাখা নয়" | শ্বশুর মশায় খোঁচা মারার এমন সুযোগ কি আর ছেড়ে দেন?বললেন" তা হলে এত চিন্তা করার কি আছে? আমি তোমার ফোনে ফোন করছি,রিং হলেই তো বুঝে যাবে ফোন কোথায়, তোমাদের আজকাল কার ছেলেদের এই উপস্থিত বুদ্ধিটুকু যদি না থাকে ,তা হলে তো মুস্কিল"| শুভময় মনে মনে বললো "এটা এমন কিছু বড় ব্যাপার নয় অনেকেই তাই করে" ", আজ নেহাত মিটিং এর টেনশন এ মাথা কাজ করছে না তাই"| কিন্তু সামনে তো আর সেটি বলা যায় না, তাই খোঁচাটুকু হজম করে,হেঁ হেঁ করে দেঁতো হাসি হেসে ম্যানেজ করল | অনেক দেরী হয়ে গেছে | সঞ্চিতাকে বলে দিল ফোনটা পেলে যেন খাবার টেবিলের উপর রেখে দেয়| বাথরুমে যাবার আগে দেখলো শ্বশুর মশায় সোফাতে আয়েশ করে বসে খুব স্মার্টলি নিজের স্মার্ট ফোনটি বার করে তাকে ফোন লাগাচ্ছেন,আর শাশুড়ি মা একসাথে দশটি করলার জুস্ সদ্য খেয়ে ওঠার পর যেমন মুখ হয় মানুষের,সেই রকম মুখ করে বসে আছেন | বাথরুমে ঢোকার পর তার কানে ফোনের মিষ্টি আওয়াজ ভেসে এল,"যাক বাবা, নিশ্চিন্ত, এবার ফোনটা পাওয়া যাবে স্নান করে বেরিয়ে দেখে সঞ্চিতা তার ফোনটি হাতে নিয়ে বসে আছে | এক গাল হেসে সে যেই ফোনটি নিতে যাবে অমনি সঞ্চিতা চিৎকার করে বলে উঠলো " তুমি এত অশিক্ষিত আমার জানা ছিল না তো | "ছিঃ,ছিঃ, বাবার আজকে যা অপমান হলো,বাবা মনে হয় আর কোনোদিনও এ বাড়ি আসবে না" | শুভময় তো কিছুই বুঝতে পারলো না | স্নান এ যাবার আগে দেখে গেল বউ হাসি হাসি মুখে চা বানাচ্ছে, স্নান সেরে বেরিয়েই দেখছে বউ এমন মারকুটে হয়ে ল, এ কি কান্ড রে বাবা | তাই খুব ভয়ে ভয়ে আমতা আমতা করে জিজ্ঞাসা করলো "কি হয়েছে বল তো"?"বাবা,মা কোথায় চলে গেলেন"? "তুমি বা এত ক্ষেপে আছো কেন"? "আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না" | সঞ্চিতা একটি হাড় হিম করা চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো "কিছুই বুঝতে পারছো না, তাই না"? "ন্যাকামো হচ্ছে"? "তোমার ফোনটা বাবার ঠিক পাশেই সোফার ফাঁকে ঢুকে গেছিলো,বাবা রিং করেই ফোনটা পেয়ে যায়, তারপর বাজতে থাকা অবস্থাতেই আমাকে দেখায়, দেখি ফোনের স্ক্রীনে যে লেখাটা বার বার ফুটে উঠছে, সেটা হল "টাকলা শ্বশুর", টাকলা শ্বশুর", "তুমি আমার বাবার নম্বর এই নামে সেভ করেছো"? "বাবা,মা ভীষণ অপমানিত বোধ করে বাড়ি চলে গেল"| শুভময় বুঝলো হাওয়া সাংঘাতিক খারাপ, এখন কিছু বলতে গেলেই কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে |তাছাড়া আজ মিটিং আছে,যা মিটমাট সব মিটিং এর পর | সে কোনো কথা না বলে ঝটপট তৈরি হয়ে নিল | খেতে খেতে দেখতে পেল সঞ্চিতা বেডরুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে | এখন শান্ত করার কোনো মানেই হয় না,যা হবে অফিস থেকে ফিরে বেরোনোর আগে সে শুধু ভগবানকে একবার ডাকলো আর একবার ধন্যবাদ দিল | ডাকলো যাতে মিটিং টা ভালো ভাবে উৎরে যায়,আর ধন্যবাদ দিল কারণ শাশুড়ি মা, শ্বশুর মশায়ের মত ফোনটা খোঁজার চেষ্টা করেননি বলে শুভময়ের ফোনে তার শাশুড়ির নাম্বারটি "গাইনির ডাইনি"বলে সেভ করা আছে। 😂

No comments:

Post a Comment

Popular Posts