- ও দাদা, নমস্কার, শুভ মহালয়া।
- মানে!
- মানে আবার কি, পূজো শুরু হয়ে গেল তাই বললাম।
- মানে!
- দূর মশাই, এর আবার মানে মানে কি?
- মানে, জানতে চাইছি, মহালয়ার সঙ্গে পূজোর কী
সম্পর্ক? এ তো আচ্ছা ক্ষ্যাপা লোক! মহালয়া মানেই তো দেবীর আগমনের শুরু, পূজো শুরু, এই যে দেখুন মা দুর্গার
মুখের ছবি দিয়ে 'শুভ মহালয়া' লিখে কত ছবি। - শুনুন, মহালয়ার সঙ্গে দুর্গাপূজোর আদৌ কোনো সম্পর্ক নেই। যারা মা দুর্গা'র ছবির সঙ্গে 'মহালয়া' লিখছে তারা
নিজেরাও জানেনা কত বড় ভুল করছে।
- যাঃ বাব্বা....! বলে কি, এতো সবজান্তা দেখছি।
- সবজান্তা নই, তবে এটুকু জানি যে, দুর্গাপূজোর সঙ্গে
এর কোনো সম্পর্ক নেই। -বললেই হলো নেই! সকালে রেডিওতে মহালয়া শোনেন না আপনি?
- ওটা মহালয়া নয়। ওটা 'মহিষাসুরমর্দিনী' নামের একটি অনুষ্ঠান। এর সঙ্গেও মহালয়া'র কোনো সম্পর্ক নেই। এই
দিনে অনুষ্ঠানটি সম্প্রচার হয়, এই পর্যন্তই। - তাহলে মহালয়াটা কি ঘোড়ার ডিম, খায়, না মাখে?
- মহালয়া কথাটি এসেছে 'মহৎ আলয়' থেকে। হিন্দু ধর্মে মনে করা হয় যে পিতৃপুরুষেরা এই সময়ে পরলোক থেকে ইহলোকে আসেন জল ও পিণ্ডলাভের আশায়। প্রয়াত পিতৃপুরুষদের জল-পিণ্ড প্রদান করে তাঁদের 'তৃপ্ত' করা হয় বলেই মহালয়া একটি পূণ্য তিথি।
- সে তো জানি। ঘাটে ঘাটে সব মন্ত্র ফন্ত্র বলে। তাতে কী
হল? পুজোর আগে জল টল দিয়ে শুদ্ধ করা হল।
-শুদ্ধ, অশুদ্ধের ব্যাপার নয়। এর সঙ্গে মহাভারতের যোগ
আছে।
-কেলো করেছে। এখানেও মহাভারত?
- আজ্ঞে হ্যাঁ। মৃত্যুর পর কর্ণের আত্মা পরলোকে গমন করলে তাঁকে খাদ্য হিসেবে স্বর্ণ ও রত্ন দেওয়া হয়েছিলো। কর্ণ এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে তাঁকে বলা হয়, তিনি সারা জীবন স্বর্ণ ও রত্ন দান করেছেন, কিন্তু প্রয়াত পিতৃগণের উদ্দেশ্যে কখনও খাদ্য বা পানীয় দান
করেননি। তাই স্বর্গে খাদ্য হিসেবে তাঁকে সোনাই দেওয়া হয়েছে।
বিমর্ষ কর্ণ বলেন, তাঁর পিতৃপুরুষ কারা সেটা তো তিনি মৃত্যুর মাত্র একদিন আগেই জানতে পেরেছেন। তার দোষ কোথায়! যমরাজ তখন বোঝেন, সত্যিই তো, এতে কর্ণের কোনো দোষ নেই। এই কারণে কর্ণকে পক্ষকালের জন্য ফের মর্ত্যে ফিরে পিতৃলোকের উদ্দেশ্যে অন্ন ও জল প্রদান করার অনুমতি দেওয়া হয়।
এই পক্ষই পিতৃপক্ষ নামে পরিচিত হয়। আর সেই
হিন্দুদের মধ্যে তর্পণের প্রথা চালু হয়।
- এ তো হেব্বি ক্যাঁচাল। এত সব তো জানতাম না।
- আরো শুনে রাখুন, পারলৌকিক ক্রিয়াকর্মের তিথি হিসেবে নির্দিষ্ট হওয়ায় একে 'শুভ' বলতে নেই।
- সে কি! শুভ মহালয়া বলবো না তাহলে? - না, বলবেন না। আপনার প্রিয়জনের শ্রাদ্ধের দিন কেউ
যদি আপনাকে 'হ্যাপি শ্রাদ্ধ' বা 'শুভ শ্রাদ্ধ' বলে, কেমন লাগবে?
আপনার
- হেব্বি মাথা গরম হয়ে যাবে। কিন্তু আমি তো না বুঝেই বলেছি।
- এমন না বুঝেই তো আমরা কতকিছু বলি। এবার বুঝলেন তো?
-বুঝলাম, তবে অভ্যাস বড় বালাই। এতদিনের অভ্যাস কি সহজে যাবে? আমরা হলাম গিয়ে 'পাবলিক', লোকে বলে তাই বলি। তা আপনার সঙ্গে কথা বলে ভালো লাগলো। আপনি ভালো থাকবেন। 'শুভ মহালয়া' দাদা। চলি এবার।
No comments:
Post a Comment