Tuesday, 28 September 2021

দুই বিঘে জমির মর্ম কথা

সেদিন ক্লাসে বাংলার স্যার পচাকে জিজ্ঞেস করল, "বলতো পচা, রবিঠাকুরের দুই বিঘা জমি কবিতায় সবথেকে পাজি এবং বদমাশ লোকটা কে?"

"এটা কি কনো প্রশ্ন হলো স্যার? এটাতো সবাই জানে যে, সবথেকে পাজিএবং বদমাশ লোকটার নাম উপেন, আর ভালো লোকটা হলো জমিদার।"

"আমাকে বোঝা হতচ্ছাড়া,, উপেন কিকরে পাজি হলো আর রাজা কি করে ভালো হলো। আর যদি বোঝাতে না পারিস আমি মেরে তোর ঠেং খোড়া করে রেখে দেবো।"

"এ আর এমন জটিল কি? আপনি মনেহয় পুরো কবিতাটাই ঠিক মতো পড়েননি, যদিও বা পড়েছেন ঠিকমতো বুঝেউঠতে পারেননি স্যার? 

দেখুন কবিতার শুরুতেই আছে "শুধু বিঘে দুই ছিল মোর ভুঁই, আর সবই গেছে ঋনে।"
উপেন যৌবনে রোজগার বলতে কিছুই করেনাই,
ঋন করে ভালোমন্দ খেয়ে জমি বিক্রি করে পরিশোধ করেছে, এখন যখন মাত্র দুই বিঘা জমিতে এসে ঠেকেছে তখন জমির প্রতি দরদ যেন উথলে উঠছে।

এবার আসাযাক উপেনের ছাত্রাবস্থার কথায় -
"একে একে মনে উদিল স্মরনে বালক - কালের কথা।
সেই মনে পড়ে জ্যেষ্ঠের ঝড়ে রাত্রে নাহিকো ঘুম -
অতি ভোরে উঠি তাড়াতাড়ি ছুটি আম কুড়াবার ধুম :
সেই সুমধুর স্তব্ধ দুপুর, পাঠশালা - পলায়ন -"
এবার ভাবুন সকাল দুপুর রাত্রি শুধুই আমের চিন্তায় মসগুল, পড়াশোনা করার বালায় নাই, এতো পাজি যে স্কুলে যাতে পড়াশোনা করতে না হয় তার জন্য সেখানেও ফাঁকি। যদি জীবনে পড়াশোনাটা ঠিকঠাক করতো তাহলে টিপছাপ দিয়ে দুই বিঘা জমিটা রাজা চালাকি করে নিতে পারতো না।

এবার আসি উপেনের বার্ধক্য বয়সে -
"মনে ভাবিলাম, মোরে ভগবান রাখবে না মোহগর্তে, 
তাই লিখি দিল বিশ্বনিখিল দু বিঘার পরিবর্তে।
সন্ন্যাসীবেশে ফিরি দেশে দেশে হইয়া সাধুর শিষ্য"।

এই পর্যন্ত পড়ে ভেবে ছিলাম শেষ বয়সে এসে ফাঁকিবাজ উপেন এবার বোধহয় ধর্ম কর্মে মনদেবে, কিন্তু ভবি ভোলবার নয়, সাধুসঙ্গ ছেড়ে সেই আমতল, ওখানেও ফাঁকি। ওরে পাগলা দুই বিঘার মোহ কাটাতে পারছিস না, আর তুই হবি সর্বত্যাগী সন্ন্যাসী???
অন্যদিকে জমিদারটাকে দেখুন কি সুন্দর অমায়িক ব্যবহার।
"বাবু বলিলেন, বুঝেছ উপেন? এ জমি লইব কিনে।"

লাইনটা লক্ষ্য করুন, চুরি বলেনি, বলেছে কিনে নেবো। তাছাড়া অতবড় একজন মানুষ তার কনো অহংকার নেই, উপেনের মতো অকাট মুর্খকে পর্যন্ত তুমি তুমি করে কত মিষ্টি ভাবে কথা বলছে।

"বাপু, জান তো হে, করেছি বাগানখানা, 
পেলে দুই বিঘে প্রস্থে ও দীঘে সমান হইবে টানা। "

শুধু সৌখিন মানুষ নয়, পরিবেশ সচেতনও বটে... সুন্দর একখান বাগান করার স্বপ্ন দেখছেন। নগদ মূল্যে দামদিয়ে জায়গাটা কিনে বাগান করবেন বলে মনস্থির করেছেন। এটা উপেনের সহ্য হলো না, যে যৌবনে সব বিক্রি করে পেটায় নমো করলো, আর বৃদ্ধ বয়সে এটা নগদে বিক্রি করতে ওর গায়ে লাগছে। আসলে তা নয়, আসল কথা হল হিংসে জমিদারের বাড়বাড়ন্ত দেখে হিংসায় জ্বলে যাচ্ছে, অন্যের ভালো দুচোখে সহ্য করতে পারে না । নিজে তো কিছু করতে পারেনি, তাই সুন্দর বাগান করতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়। এটা সমাজেরও ক্ষতি..
এবার আপনিই বলুন স্যার কে ভালো আর কে খারাপ?

(আজ নিয়ে সাতদিন হলো স্যারের জ্ঞান ফেরেনি..... হয়তো কোভিড2 আক্রান্ত.....)

No comments:

Post a Comment

Popular Posts