Thursday, 16 April 2020

ডিভোর্স ইত্যাদি



প্রিয় শাশুড়ি মা,
চিঠিটা আপনাকে না লিখে আপনার ছেলেকে লিখতে পারতাম। লিখলাম না কারণ যে অকালকুষ্মাণ্ডটাকে আপনি মার্কেটে নামিয়েছেন, সে হয়ত চিঠিটা খুঁজেই পেত না। রাখতাম খাটে, ও হয়ত সেটার ওপরেই মুড়ি টুরি মেখে খেয়ে নিত। 
দাঁড়ান একটা করে সাবহেডিং দিয়ে শুরু করি।
প্রথমে আসি আপনার ছেলের কথায়- 
আপনাকে মা একটাই প্রশ্ন, কী খেয়ে বানিয়েছিলেন বলুন তো এমন মালকে? একে মাল বললে মাল বলে যদি কিছু থাকে সেও লজ্জা পাবে। ঘুম থেকে শুরু করি। আপনার ছেলে এমন ঘুমায় যে কুম্ভকর্ণও লজ্জা পাবে। নাক ডাকে তো ঠিক আছে, নাক ডাকার সঙ্গে সঙ্গে তার গ্যাসের মেশিনটাও সমান তালে চলতে থাকে। নাক মুখ পেছন সব দিক দিয়ে শব্দ বেরোয়। আর গন্ধ? ভোপাল গ্যাস কান্ডেও দেশের লোককে এত কষ্ট পোষাতে হয় নি। প্রতিটা রাতে আমাকে জেগে বসে থাকতে হয় আপনার ছেলের ঘুমের জন্য। এমন করে মুখ হাঁ করে ঘুমাবে, একটা গোটা অনুব্রত মণ্ডল তাতে ঢুকে যেতে পারে। ঘুম থেকে উঠে আপনার ছেলের বাথরুমে গিয়ে কাপড় ছাড়ে না। জামা কাপড় পরে বসে পড়ে। সে করুক। ফ্ল্যাশ টানবে না? প্রতিদিন সকালে উঠে কমোডে হলুদ কালারের বিভিন্ন ধরণের বিস্ময়বোধক চিহ্ন দেখে দেখে আমার মাথা খারাপ হয়ে যায়। ঘরের একটা কাজ করবে না। সারা ঘর ময় আপনার ছেলের জাঙ্গিয়া, বারমুডা, স্যান্ডো গেঞ্জি ঘোরা ফেরা করে। আর খাবার কথা? আচ্ছা বলুন তো আমাকেই কেন প্রতিবার ল্যাজা খেতে হবে? কে বলেছে ঘরের বউয়েরা মুড়ো খেতে পারে না? কোথাও লেখা আছে? 
এবার আসি সেক্স লাইফে। না না। লজ্জা পাবেন না, আপনাকে শুনতে হবে।  আপনি তো প্রতিদিন সকাল বিকেল আমার কান মাথা গরম করে দেন “নাতি চাই নাতি চাই” করে। কী করে হবে? আপনার ছেলে রাত দশটায় বাড়ি ফিরে খেয়ে দেয়ে পাশ ফিরে ঘুমিয়ে পড়েই শব্দগন্ধব্রহ্ম শুরু করে দেবে। আপনি আমাকে বলুন কী করে নাতি নাতনি হবে? একবার তো ঠিক করেছিলাম আউটসোর্সিং করব। তারপর পিছিয়ে এলাম। বাপের বাড়ি থেকে খাট, আলমারি, ড্রেসিং টেবিল সবই আনা যায়, নাতি নাতনি তো আনা যায় না।
কোলে বসিয়ে, বাবা বাছা করে যে জিনিসটিকে বানিয়ে বড় করে তুলেছেন, বিশ্বাস করুন, জিনিসটা জাস্ট হয় নি। নেহাত আমি বলে দু বছর ঘর করে গেলাম। অন্য কেউ হলে তাও করবে না। আপনি খুব বলেন সোনার আংটি আবার বাঁকা! হাসিও পায়। সোনার আংটি নাকি! খ্যাক খ্যাক খ্যাক খ্যাক। আপনার ছেলে টাংস্টেনের আংটিও না।
এবার আসি আপনার আর শ্বশুর মশাইয়ের কথায়-
আপনি শাশুড়ি না রাজ্য সরকার? সারাক্ষণ ছেলের দোষ চেপে যান। ছেলের কোন দোষই দেখতে পান না আপনি। আপনার ছেলে কিছু করলেই “ছোট্ট ঘটনা”, “ছোট ছেলেরা এরকম করেই থাকে”, “সব সাজানো” বলে চালিয়ে দেন। আর আমি কিছু করলেই এমনভাবে সেগুলোকে ট্রিট করেন যেন আমি মানুষ না, সিপিএম। মাংস হলে আপনার ছেলে দশ পিসের মধ্যে সাত পিস খাবে। এক পিস আমি, এক পিস আপনি আর এক পিস শ্বশুর মশাই খাবে। কেন? আমার কি মাংস খেতে ইচ্ছা করে না? আমি মাংস খাব না? খাব না আমি মাংস? যেদিন বাইরে থেকে খাবার আসে, সেদিন আপনার ছেলে এমন ভাবে হামলে পড়ে সে খাবার খায় যেন সোমালিয়ার দুঃস্থ মানুষ। কী শিক্ষা দিয়েছেন বলুন তো? প্রতিবার বাড়িতে খাবার আসবে আর আপনার ছেলে প্রতিটা বিরিয়ানির প্যাকেট হাতড়ে দেখবে কোনটায় লেগ পিস আছে। যেটায় আছে, সেটা তিনি খাবেন, আর বাকি প্যাকেটগুলো সব ঘেঁটে দেবেন। লেগ পিস তিনি খাবেন আর আমার ভাগ্যে পড়বে ছিবড়া ব্রেস্ট পিস। কেন? পরের বাড়ির মেয়ে বলে কি পাপ করে এসেছি? আপনি এমন করে ছেলেকে আগলে রাখবেন, যেভাবে আইটি সেল ফিলীপ মোষকে আগলে থাকে। আপনার ছেলে যদি বলে হরিণ এক ধরণের পাখি, আপনি বলবেন হ্যাঁ, হরিণ এক ধরণের পাখি। কোন দিন বলবে আপনার বাড়ির টমের হিসিতে সোনা পাওয়া যায়। আপনি তুরস্কের কোন এক রিসার্চ পেপার গুগল থেকে নামিয়ে প্রমাণ করতে শুরু করে দেবেন আপনার ছেলেই ঠিক। কেন মা? ছেলে জন্ম দিয়েছেন, করোনার ভ্যাকসিন না। আর শ্বশুর মশাইয়ের কথা কী বলব। উনি শ্বশুর মশাই না পলিট বুড়ো? এমন পোলাইট বুড়ো, যে বউকে কিছুই বলবেন না। আপনি যা বলবেন সেটাই ঠিক। আপনি শাশুড়ি হিসেবে শ্রীময়ীর শাশুড়ির থেকেও খারাপ। আর  শ্বশুর মশাইকে দেখে মাঝে মাঝে এল কে আদবানীর মত লাগে। দলে আছেন, কেন আছেন নিজেও জানেন না।  
আপনাদের ঐ ইয়ের সংসারে আমি আর থাকলাম না। যা পারেন করবেন। আর হ্যাঁ, ছেলেকে পারলে ম্যানহোলের তলায় রেখে দিন। আপনার ওটা ছেলে না, অ্যাস… মানে ম্যান হোল।
মারান।
ইতি
আপনার বউমা 
Sorry
এক্স বউমা
(ক্রমশ)

No comments:

Post a Comment

Popular Posts