বাঙালি ওয়াইন খেয়ে নেশা খোঁজে। অথচ ওয়াইন তৈরি হয়েছিল খাবারের অংশ হিসেবে—একটি সঙ্গীতের মতো, যা রসনাকে জাগিয়ে তোলে। ফরাসিরা প্রতিদিন দু’বেলা খাবারের সঙ্গে ওয়াইন পান করে, ঠিক যেমন আমরা একবেলা দই খাই।
ওয়াইন শুরু করতে হয় খাবারের আগে—এক ঢোঁক দিয়ে রুচি জাগাতে।
রেড ওয়াইন মানে মাংসের সঙ্গী;
হোয়াইট ওয়াইন মানে মাছের সাথি।
আর শ্যাম্পেন? সেটি আসলে এক প্রজাতির হোয়াইট ওয়াইন—যা ফেনিল, উৎসবমুখর, আর জন্ম থেকেই বিলাসিতার প্রতীক। শ্যাম্পেনের প্রতিটি বুদ্বুদ যেন আকাশের একেকটি তারাকে গ্লাসে বন্দি করে।
🔖ভদকা : বরফের দেশে জন্ম, গরমে মৃত্যুবরণ
বাঙালি ভদকা খায় গরমে! অথচ এটি রাশিয়ার শীতের সন্তান—একটি পানীয়, যা বরফে জমে যাওয়া শরীরে আগুন জ্বালাতে উদ্ভাবিত। রাশিয়ান শ্রমিকেরা একসময় সকালবেলায় এক ঢোঁক ভদকা খেয়ে বের হতেন কাজে, যেন হিমে জমে না যান।
এই পানীয় গরমে খেলে শরীরের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়—অর্থাৎ এটি একপ্রকার নরকীয় পানীয় হয়ে ওঠে। তাই গরমে ভদকা মানেই শরীরকে ধোঁয়ায় পরিণত করা!
আর শ্রেষ্ঠ ভদকার নাম জানতে চাইলে মনে রাখুন—Stolichnaya—রাশিয়ার গর্ব, শীতের মুকুট।
🔖জিন : গরমের সান্ত্বনা, শীতের বিপদ
বাঙালি জিন খায় শীতে। অথচ এই পানীয়ের জন্মই হয়েছে গরমে শরীরকে ঠান্ডা রাখার জন্য। মূল উপাদান জুনিপার বেরি শরীরে শীতলতা আনে, এবং গরমের দিনে এটি একপ্রকার প্রাকৃতিক এয়ার কন্ডিশনারের কাজ করে।
এক চামচ জিন এক গ্লাস ঠান্ডা জলে মিশিয়ে পান করলে শরীরে ছড়িয়ে পড়ে এক অদ্ভুত প্রশান্তি। এজন্যই গলফ খেলার সময় পশ্চিমের খেলোয়াড়রা এটি ‘রিফ্রেশার ড্রিংক’ হিসেবে ব্যবহার করেন। কিন্তু শীতে? শীতে জিন মানে আত্মহত্যার উপায় একটু রুচিসম্পন্নভাবে!
🔖 ব্লাডি মেরি : ককটেল নয়, ককটেলের বিরামচিহ্ন
বাঙালি ‘ব্লাডি মেরি’ খায় মূল পানীয় হিসেবে। অথচ এটি অন্তর্বর্তী পানীয়—দুটি মদের মাঝে একপ্রকার সেতুবন্ধন। টমেটো জুসের কারণে এটি পূর্ববর্তী পানীয়ের প্রভাবকে নিরপেক্ষ করে, নতুন পানীয়ের জন্য রসনাকে প্রস্তুত করে।
এক কথায়, ব্লাডি মেরি হলো ‘এন্টি-ড্রিংক’।
যেমন কথার মাঝে বিরতি দরকার, তেমনি পানীয়ের মাঝেও দরকার একটু বিরতি—ব্লাডি মেরি সেই বিরতির রূপ।
🔖হুইস্কি : বরফের কবিতা
বাঙালি হুইস্কি খায় “র” বা জলে মিশিয়ে। অথচ হুইস্কি মানে হল জল ও আগুনের নিখুঁত সমন্বয়—যেখানে বরফই আসল মধ্যস্থ।
মূলনীতি হলো—প্রথমে গ্লাসে বরফ দিন, তারপর তার উপর দিয়ে স্কচ ঢালুন।
তাহলেই স্কচ বরফ বেয়ে নেমে আসবে এক স্বর্গীয় ধারা হয়ে, ঠিক যেমন পাহাড়ি ঝর্ণা নেমে আসে স্কটল্যান্ডের উপত্যকায়। স্কচকে কখনও জলে নিমজ্জিত করবেন না, কারণ এটি নিজেই স্কটিশ ঝর্ণার সন্তান!
মদ মাতালের জন্য নয়। মদ হলো যিনি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে জানেন, তাঁর জন্য এক পরিমিত সৌন্দর্য। যিনি মদ পান করেন না, কারণ তিনি খেয়ে ফেলেন, তাঁর কাছে মদ হারাম।
কিন্তু যিনি মদ পান করতে পারেন—অর্থাৎ আস্বাদন, নিয়ন্ত্রণ ও সম্মান করতে জানেন—তাঁর কাছে মদ একপ্রকার সঙ্গীত, একপ্রকার ধ্যান।
No comments:
Post a Comment