Thursday, 6 November 2025

ভূত

বাঙালী যে কত পরিমানে ল্যাদখোর সেটা বোঝা যায় বাঙালির ভূত তাড়ানো দেখে। 


ইংরেজদের ভূত তাড়াতে ক্রুশ জোগাড়  করতে হয়,  হোলি ওয়াটার জোগাড় করতে হয়, ভূতে ধরা নাইটি পরা মেমকে ক্রুশ দেখিয়ে জল ছিটিয়ে বাইবেল পড়ে শোনায় পাদ্রী, তারপর মেমভূত "সি উ লেটার" বলে বিদেয় হয়। 


হিন্দি ভূতনিকে মুখস্থ শোনাতে হয় গোটা হনুমান চল্লিশা তবে গিয়ে নায়িকার ফিগার থুড়ি দেহ ছাড়েন। 


উর্দু ভূত শুনতে চায়, আয়াতুল কুর্সি। 


কিন্তু বাঙালি ভূতের সেসব বালাই নেই, চার বার "রাম-রাম-রাম-রাম" বললেই নাকি, ভূত "ধ্যারবাঁ*" বলে চলে যায়।


কিন্তু সেবার আমি পরেছিলাম এক বিচ্ছিরি গায়ে পড়া ভূতের পাল্লায়।


লাস্ট মেট্রো থেকে যতক্ষনে নেমেছি ততক্ষণে আমার মেয়ে হিসেবে একা রাস্তায় থাকার  ভ্যালিডিটি শেষ,  অটো-রিকশা-ট্যাক্সির ভিতর সব মানুষ কেই মোটামুটি পোটেনশিয়াল রেপিস্ট মনে হচ্ছে, তো ঠিক করলাম হাঁটবো। মেট্রো থেকে হেঁটে বাড়ি যাওয়া যায় মানেই বিশাল শহরে থাকি এমন নয়, এ জায়গাটাকে কলকাতা বলতে হলে  গড়িয়াহাটকে আউটস্কার্ট বলতে হয়।


রাস্তা পার হয়ে গলিতে ঢুকতেই বাঁশ বাগান থেকে সরসর করে কি একটা নেমে এলো। বুঝলাম কেসের বিলিরুবিন হাই। 


আমি তো ভয় পাই না, তাই সটান পিছন ফিরে বললাম, "কেক্কেক্কেরে!?"

ভূত বললো, "আমি ভূত"

আমি বললাম, "আমি ভূতে বিশ্বাস করি না"

ভুত বললো, "সে তো তুই তোর বয়ফ্রেন্ডকেও বিশ্বাস করিস না, গুডনাইট বলার পর চারবার এমনি আর দুবার ঘুম ভেঙে অনলাইন হোস এটা দেখার জন্য যে ও অনলাইন আছে কি না।  সেটা তোর ট্রাস্ট ইস্যু। আমি কি করবো?"

"একি! আপনি এরম তুই তোকারি করছেন কেন?"

"দেখ এটা তোর ফেসবুক নয়, যে হাই হ্যালোর পর র‍্যান্ডম সোজা তুই তোকারি করলে ঘোস্ট করে দিবি,  আর আমি তো এমনিই ঘোস্ট" বলে ভূতটা বিচ্ছিরি হ্যা হ্যা করে হাসতে শুরু করলো।


আমার ভীষণ  বিরক্ত লাগলো, আমি "****" বলে গটগটিয়ে হাঁটা লাগালাম।  


ভূতটা সঙ্গে সঙ্গে "ও দিদি ও দিদি শুনুন না" করতে করতে পিছন পিছন আসতে শুরু করলো। তারপর হঠাৎ দেখি দপ করে সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। প্রচন্ড তেতো মুখে বললাম, "কি হয়েছেটা কি?"

"শুনুন না,  এই ভাইটাকে একটু হেল্প করে দিন না.. বড্ড বিপদে পড়েছি"


দেখলাম এই সুযোগ, এবার ঠিকমত তিন বরের ডিলটা করে ফেলতে পারলেই সারা জীবন সর্টেড।  

বললাম, "কি হেল্প?"

"আর বলবেন না,পুরো অভিমন্যু মারা কেস।  ছেলেপুলে প্ল্যানচেট করে ডেকে এনেছে এখন আর ফেরত পাঠাতে পারছে না।"

"এতে আমি কি করবো?  যান তাদের সবার ঘাড় মটকে দিন, আমায় যেতে দিন মা বকবে"

"এরম করবেন না, প্লিজ হেল্প করুন, ওই নামটা একবার বলুন"

"কোন নামটা?"

"ওই বাল্মিকী যার কথা লিখেছেন"

"কে? রাবণ?"

"না না ভালো লোকটা"

"বিভীষণ? "

"উফফ না অযোধ্যার রাজা"

"দশরথ?"

"তার ছেলে.."

"ভরত"

"আপনি কিন্তু এবার **** করছেন"

"করছি তো"

"আচ্ছা.. আপনার ফেভারিট  মদ কী?"

"শঁপাঁ"

"ক্যাঁ?"

"আরে শ্যাম্পেইন অশিক্ষিত"

"এটা ফেসবুকের সেল্ফ র‍্যাপিড ফায়ার নয়, আসলে কি খাস বল"

"ওল্ড মঙ্ক"

"শিওর? ক্যাপ্টেন মর্গ্যান না?"

"না"

"একটা হাফ সাড়ে সাতশো আছে আমার কাছে"

"কি করে?"

" ওই হাফ বোতল নামিয়ে ওরা প্ল্যাঞ্চেটে বসেছিলো,  আমি বাকি হাফটা ঝেড়ে দিয়েচি।"


রাত তখন তিনটে সাত,  ছাদে আমি, ভূত আর ওল্ড মঙ্কের খালি বোতল একসাথে গড়াগড়ি  দিচ্ছি। একটা সময় ভূত বললো,  "ওই গানটা তোর গলায় শুনতে ইচ্ছে করছে.."

"কোনটা?"

"ওই যে উত্তমবাবুর পার্টিতে মদের গানটা.."


গলা জড়িয়ে জড়ানো গলায় গান ধরলাম,


"এই তো জীবন

যাক না যেদিকে 

যেতে চায় প্রাণ,

বেয়ারা, চালাও ফোয়ারা..

জিন শেরি, শ্যাম্পেন, রাম"


ব্যাস! চলে গ্যালো! নো এক্সপ্লেনেশন জাস্ট ঘোস্ট করে দিয়ে চলে গ্যালো! বরটা অবধি চাইতে পারলাম না। এই জন্য শালা! এই জন্য কাউকে বিশ্বাস করি না। সবাই একরকম শালা! সব্বাই!


সে যাক গে যা বলছিলাম,  লোলা.. লুলু...

No comments:

Post a Comment

Popular Posts