এককালে শোকসভা হতো , এখন শোক কে শক দিয়ে শোকসার্কাস হয় ফেসবুকে । এই তো সেদিন বাজারে ঝরুর সঙ্গে ছগুর দেখা ।
ছগু বলল - - 'কাকা মারা গেলো , অর্শ অপারেশন করাতে গিয়ে ...’
- 'রিপ রিপ' । ফেসবুকে দিয়েছিলে ?
- হ্যাঁ ।
- কটা লাইক আর কমেন্ট পেলে ?
- ৬৭ টা লাইক আর ১০৮ টা কমেন্ট । তুমি তো কবিতাও দিয়েছিলে একটা ।
‘আজ তোমায় নিয়েছে কেড়ে প্রাণঘাতী এক পাইলস, চার কাঁধে তোমাকে যেতে হবে ফাইভ হান্ড্রেড মাইলস'।
এককালে লোকজন শোকে পাথর হতেন, এখন শোকে আগে অনলাইন হন তারপর পাথর হন । এই তো সেদিন কমলদার দাদু মারা গেলেন । কমলদা লিখলেন - 'আজ একটু আগেই দাদু দেহ রাখলেন' । এবার চারিদিক থেকে লাল পিঁপড়ের মতন কাতারে কাতারে মানুষ সেই দুঃখের মিছিলে যোগ দিতে চলে এলেন । বেশীরভাগ লোক লিখলেন - রিপ ! যাদের আর একটু বেশী কষ্ট হয়েছে বা হাতে বেশী সময় তারা লিখলেন , রেস্ট ইন পিস । যাদের আরও বেশী কষ্ট বা আরও বেশী টাইম আছে হাতে তারা লিখলেন , ওনার আত্মার শান্তি কামনা করি । যাদের বড় বেশী কষ্ট তারা বললেন , বিশ্বাস করতে পারছি না । অথবা , আমি দাদুকে চিনতাম না কিন্তু কেন জানি না বড্ড কষ্ট হচ্ছে । সকালে ঠাণ্ডা লুচি আর বাসি ঘুগনি খেয়ে গৌতমদার বুকের কাছে এসে একটা সিরিয়াস ঊর্ধ্ববায়ু আটকে ছিল । সেটাকেই কষ্ট বলে চালিয়ে দিয়ে গৌতমদা লিখলেন - 'বুকের কাছে একটা কষ্ট এসে আটকে আছে' । সেই কমেন্টে আবার ১০ টা লাইক । যদিও এখানেই শেষ নয় । কমলদার পরিচিত ভজা ভট্ট পাড়ার নাটকে রাবণ , রাক্ষস , যম এসবের পার্ট করে বেশ আঁতেল হয়েছেন। তিনি বেশ সিরিয়াস পোস্ট লিখবেন , এটাই স্বাভাবিক ! উনি লিখলেন - 'গলার কাছে একটা দলা পাকানো কষ্ট আর কান্না' । কেউ কেউ সেই পোস্টে লিখলেন - 'আমার কষ্টটাও ওইরকম' । কেউ জাস্ট লিখেছেন , সেম । মানে , উনিও একইরকম , অর্থাৎ সেম ফিল করছেন । কেউ এটাও ভাবছেন - 'আরে আমারও তো গলার কাছটায় দলা পাকানো কষ্ট আর কান্না ছিল , কিন্তু ভজাদা আগে পোস্ট করে দিলো' । ভজাদা আগে পোস্ট করে দেওয়ায় অনেকেরই গলার কাছের কষ্ট ঢেঁকুর হয়ে উঠে হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে আর কান্না শুকিয়ে গেছে । কেউ কেউ আবার চোখ বুজে টাইপ করেন আর অদ্ভুত বানান লেখেন 😩। শ্যামদা লিখলেন - 'আমার হুকটা কষ্টে ডেটে যাচ্ছে' । বুকটা কষ্টে ফেটে যাচ্ছে , এটাই লিখতে চেয়েছিলেন । ওদিকে আবার বিমলের পোস্টে শ্যামদা লিখলো - 'যন্ত্রণার ফল গু ধারা' । ওই ফল্গু ধারা লিখতে গিয়ে বিপত্তি ! তবে দুঃখ তাঁদের সবচেয়ে বেশী হয় যারা বারবার পিতৃহীন , দাদুহীন , ঠাকুমাহীন ইত্যাদি হন। কেলাবের নদুদা মরলেও 'আবার পিতৃহীন হলাম' , ওদিকে মাদাগাস্কারের কেত্তনশিল্পী মরলেও 'আবার পিতৃহীন হলাম' !
তবে কমলদা পুনুদার উপর বেজায় চটেছেন। দাদু টেঁসে যাবার এক সপ্তাহ আগে থেকেই কমলদা আপডেট দিচ্ছিলো ... 'দাদু আর খাচ্ছে না' , 'দাদু আর বেডপ্যান চাইছে না' । এদিকে পুনুদা আবার পাহাড়ে যাবেন , ওখানে টাওয়ার নেই । তাই এর মধ্যে কমলদার দাদু মরলে , রিপ লেখা হবে না । তাই , উনি কমলদার কোন এক পোস্টে লিখে দিলেন - 'আমি তো পাহাড়ে যাচ্ছি । আমি ফিরে আসার আগে যদি কিছু হয়ে যায় ! তাই 'আগাম রিপ' লিখে গেলাম ।' আগাম শুভেচ্ছা হলে , আগাম রিপ বা রেস্ট ইন পিস হতেই পারে ! পুনুদা আবার অবিচুয়ারি স্পেশালিষ্ট । তাই , কোন বুড়ো হসপিটালে যাচ্ছে খবর পেলেই পুনুদা অবিচুয়ারি রেডি করে রাখেন । আরে অবিচুয়ারির হ্যাজানি নামাতে ইনফো জোগাড় করতে টাইম লাগে ভাই ! যাইহোক , সেই বুড়ো বেঁচে বাড়ি ফিরলে অবিচুয়ারিটা এদিক ওদিক পালটে স্মৃতিকথা হিসেবে পোস্ট করে দেন , আর বুড়ো টেঁসে গেলে অবিচুয়ারি পোস্ট হয়ে যায় । মরুক বা বাঁচুক , দুটো কেসেই পুনুদা লাইক , মন ছুঁয়ে গেলো , কিকরে লেখেন এমন , এসব পেয়ে থাকেন ।
ফেসবুক অঞ্চলে অনেক প্রাণী ঘুরে বেড়ায় যারা না পড়ে লাইক , কমেন্ট করে । সময় কম , পোস্ট অনেক । এবার কেউ হয়তো তার দাদুর ছবি দিয়ে অনেক কিছু লিখেছেন । এবার এতো বড় পোস্ট পড়ে দেখার সময় নেই যে ওটা দাদুর জন্মদিন উপলক্ষে লেখা নাকি দাদু পার্মানেন্ট শাট ডাউন হয়ে গেছেন বলে লেখা ! ফলে অনেক উজবুক জন্মদিনের পোষ্টে লিখে ফেলেন - ভাবতেই পারছি না । আবার কেউ মৃত্যুদিনের পোস্টে লেখেন - কি মিষ্টি লাগছে !
বাজারে এমনটাই এখন "ইন'--
😭😭😂😂
No comments:
Post a Comment