গান্ধার প্রদেশের রাজা সুবল ও রানী সুদ্রামার জেষ্ঠ পুত্র শকুনি সহোদরা গন্ধারীকে অতি স্নেহ করতেন, কারণ তিনি রূপসী ও বিদুষী, ধৰ্মনিষ্ঠা।রাজ জ্যোতিষী, গান্ধারীর অকাল বৈধব্য ভবিষ্যৎ বানী করলে, একটি ছাগলের সাথে গান্ধারীর বিয়ে দিয়ে, ছাগলটি কে মেরে তার কপাল যোগ খন্ডন করা হয়।
এ সেই গান্ধার, যা লোকমুখে গান্ধাহার ও পরে কান্দাহার হয়, যা অধুনা আফগানিস্তান এর একটি প্রদেশ।
ধৃতরাষ্ট্র অন্ধ হওয়ার কারনে, যোগ্য রাজকন্যা পাত্রী খোঁজা দুরুহ হয়ে ওঠে, তার অভিভাবক ভীষ্ম ও বিদুরের পক্ষে। তাই হস্তিনাপুরের বহুদূরে, ক্ষুদ্র রাজ্য গান্ধারের রাজকন্যা গান্ধারীকেই
ধৃতরাষ্ট্রের যোগ্য পাত্রী নির্বাচিত করলেন ভীষ্ম। গান্ধারী বুঝলেন,
এ অসম বিয়ে মেনে না নিলে, গান্ধার দেশে পরাক্রমশালী ভীষ্ম ও ধৃতরাষ্ট্র, রক্তগঙ্গা সৃষ্টি করবেন, তাই রাজী হলেন। বিয়ের পরে, তার রূপ, শিক্ষা, বুদ্ধি স্বামীকে ছাপিয়ে না যায়, তাই নিজের চোখ আজীবন বেঁধে রাখলেন।
কিন্তু ভীষ্ম অচিরেই জানতে পারলেন, রাজ জ্যোতিষীর ভবিতব্য কহন ও গান্ধারীর ছাগ বিবাহ ও বৈধব্য। এ সত্য, রাজা সুবল বা রাজপুত্র শকুনি গোপন করায়, ভীষ্ম আক্রমণ করলেন গান্ধার রাজ্যকে। রাজা সুবল, শকুনি ও তার অজস্র ভ্রাতা, আত্মীয় বন্দি হলেন।বন্দি শিবিরে ধৰ্ম মেনে, সব বন্দিকে একটি ভাতের দানা খেতে দেওয়া হতো। কিন্তু সবাই, সেই ভাত, রাজপুত্র শকুনিকে দিয়ে দিতো, যাতে প্রতিশোধ নেবার তাগিদে অন্তত
শকুনি বেঁচে থাকে। শকুনি শপথ নিয়েছিল,ভীষ্ম ও কুরু বংশ, তিনি
একাই ধ্বংস করবেন।আহারের তাগিদে, শকুনির ভাই, বাবা মারা গেলে তাঁদের মাংস খেয়েই মনের জোরে শকুনি বেঁচে রইলেন ও বাবার পায়ের পাতার হাড়( Metatarsal bones)থেকে তৈরী করলেন পাশা খেলার গুটি।
শুরু হলো শকুনির প্রতীক্ষা, কারণ শকুনি জানতেন, কেবল রক্তপাত এড়ানোর কারণেই,
গান্ধারী ইচ্ছের বিরুদ্ধে,অন্ধ রাজাকে বিয়ে করেও রক্তপাত এড়াতে পারলেন না।
****** বাকিটা সবাই জানে।যুদ্ধের পরে,গান্ধারীর অভিশাপে, ভগবান শ্রী কৃষ্ণের বংশ ধ্বংস হয়ে যায়। এ সেই গান্ধার বা আফগানিস্তান, যেখানে রাজা আলেকজান্ডার জয় পতাকা তুলেও বেশিদিন বাঁচতে পারে নি। খ্রিস্টপূর্ব ৩২৭ সনে, মৌর্য বংশ এখানে রাজত্ব করলেও বেশী দিন
টেকে নি ও তার পরেও অষ্টম, নবম শতাব্দীতে বুদ্ধ ধৰ্ম প্রচার হলেও, বৌদ্ধধর্মী ও তাদের সভ্যতা বিলীন হয়ে যায় ।
ইংরেজরা ভারতকে পরাধীন করলেও, আফগানিস্তান জয় করতে পারে নি। পাকিস্তান শত চেষ্টাতেও দখল নিতে পারে নি । পারে রাশিয়া দখল নিয়েও পস্তাতে থাকে। আমেরিকা তো আফগানিস্তানে, আরেক ভিয়েতনামের নজির সৃষ্টি করলো।
যদুবংশ ধ্বংস হওয়ার মতো এখন তো তালিবানরা গৃহযুদ্ধ শুরু করেছে, তারাও ধ্বংস হবে।
এ এক অভিশপ্ত দেশ আফগানিস্তান । গান্ধারী ও শকুনির আক্রোশ, আজও বোধহয় ভেসে বেড়ায় কাবুলের পাহাড়ে পাহাড়ে ।
No comments:
Post a Comment