পাড়ার মোড়ের ফুলওয়ালী কাকিমাটা শেষ বেলীর থোকাটা বিক্রি করতে গিয়েও পাশে সরিয়ে রেখে
একগাল হেসে বললে,
- “এ ফুল বিক্কিরি হবে না বাবু।”
তাড়াতাড়ি হাত চালিয়ে ব্যাগপত্তর গোছাতে গোছাতে মনে
মনেই বকবক করতে লাগল ফুলওয়ালী,
- “মানুষটা কবে থেকে বিছানায় শুয়ে রয়েছে, গাছের ফুলগুলোও মানুষটার দেখা হয় না। খালি হসপিটাল আর ওষুধ। আজ মানুষটার মাথার পাশের জানালাটার উপর বড়ো স্টিলের বাটিটার জলে বেলীর থোকাটা ভাসিয়ে রাখব। আমার মানুষটার মনটা ভালো হবে নিশ্চিত।”
ওদের মুহূর্তটুকু *বন্ধক* থাক ভালোবাসার কাছে।
❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️
ক্লাস সেভেনের ছেলেটাকে পড়ানো শেষ করেই* মুখচোরা কলেজ পাশ ছেলেটা মাথা নীচু করে আমতা
আমতা করে বলেই ফেলল,
– “কাকিমা, আজ মাইনের টাকাটা পেলে একটু উপকার
হতো।”
মিনিট পাঁচেক পর টাকাটা হাতে পেয়েই মুখচোরা ছেলেটার মুখে একগাল হাসি ফুটল, - “বাবার শীতের শালটা কিনে তবে বাড়ি যাব। পাতলা চাদরটা গায়ে দেওয়া বের করছি এবার। খুব বকব কথা
না শুনলে।”
এই বকুনিটুকুও থাকুক ভালোবাসার রোজনামচায়।
🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺
বাবা নামক মানুষটা অফিসফেরত ট্রেন থেকে নেমে *ভ্যানে* উঠেও নেমে গিয়ে হাঁটতে শুরু *করল,* ভ্যানকাকু পেছন দিক দিয়ে হাঁক দিয়ে বলল,
- “ও দাদা কি হল, আজ যাবেন না?”
লম্বা চওড়া মানুষটা হেসে বললে,
- “আজ নাহয় একটু হাঁটি, শরীরটা ভালো থাকে যে
হাঁটলে।”
সামনের দিকে তাকিয়ে আবার হাঁটতে হাঁটতে পকেটের
মানিব্যাগে হাত রেখে ফিসফিসিয়ে উঠল, - “মেয়েটা বড্ড নাচতে ভালোবাসে। সারাদিন কেমন ফড়িং -এর মতন নেচে নেচে বেড়ায়। ওকে নাচের ক্লাসে ভর্তি করে দেব। মাইনেটা উঠে আসবে। রোজ রোজ ভ্যানে না চড়ে *হাঁটলে* উপকারও হবে।”
হেঁটে ফেরার রাস্তাটুকু এগোেক ভালোবাসায়।
🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼
বিয়ের লগ্নের মিনিট পাঁচেক আগেই খুব প্রিয় বান্ধবীটি
মেয়েটার কানে কানে এসে বললে,
- “আর্য ফিরে এসেছে রে। ও জানতে পেরেছে রাহুলের সাথে তোর কোনো সম্পর্ক ছিল না, ভুল বোঝাবুঝি। বিয়েটা ভেঙে দিতে পারিস এবার একটু ভেবে দ্যাখ | গেটের বাইরে ও দাঁড়িয়ে আছে তোর জন্য।” একগাল হেসে কনে মেয়েটা আলমারির থেকে একটা
রুমালে বাঁধা এগারোটাকা বান্ধবীটির হাতে দিয়ে বলল, - “বছর দুই আগে হাতে টাকা ছিল না। ঠাকুরকে বলেছিলাম আর্য সত্যিটা জানতে পারলে এগারো টাকার পুজো দেব। আমার তো আর হল না। আর্যকে বলিস
টাকাটা দিয়ে পুজো দিতে।" বান্ধবীটি ভীষণ অবাক হয়ে বলল,
- “তুই এই বিয়েটা করবি?”
*কনে* মেয়েটা বিয়ের পিঁড়িতে বসতে বসতে বলল,
- “যে মানুষটা আমায় বিয়ে করতে এসেছে, সেই মানুষটার চোখ ভর্তি শুধু বিশ্বাস।”
এই লগ্নটুকুও থাকুক ভালোবাসার মুহূর্তে।
💚💚💚💚💚💚💚💚
বাজারের ব্যাগটা নামিয়ে বাবা নামক মানুষটা
ফিসফিসিয়ে মা'কে বললে,
- “পমফ্রেটের দামটা বেড়েছে আবার। আমাদের জন্য বাটা এনেছি। আর মেয়েটার জন্য একটা পমফ্রেট
আনলাম। বুঝলে?” কি বোঝা হল সেটা জানাই বাকি থাকল,
মা মানুষটাকে একটু পরেই উঁচু গলায় বলতে শোনা গেল, - “আরে বাহ্ এতো জ্যান্ত বাটামাছ গো। মেয়েটা যে কি খায় ঐ বরফের পমফ্রেট। ওর পমফ্রেটের আলাদা ঝোল করে দেব আর আমাদের বাটামাছটা কালোজিরা দিয়ে করব কিন্তু।”
বাবা-মা'র বোঝাবুঝিটুকুও ভালোবাসা মতন।
বড্ড সাধারণ মানুষগুলোর মুহূর্তরা বাঁচুক ভালোবাসায়।
💕💕💕💕💕💕💕💕
No comments:
Post a Comment