যেদিন ছেলেটির জন্ম হয়েছিল .. ! বাড়ি আনন্দের জোয়ারে ভেসে গেছিল .. "এই তো আমাদের বংশপ্রদীপ" "আমাদের বৃদ্ধকালের লাঠি হবে" .. সেদিন ছেলেটির সাথে সাথেই জন্ম হলো কিছু কর্তব্য, দায়িত্ব ও আশা-ভরসা।
সেদিন ছেলেটি কিন্তু কাঁদেনি, হেসেছিল ।
যেদিন পাঁচবছরের ছেলেটি পরে গিয়ে পা কাটল, তাকে শেখানো হলো "ছেলেরা কাঁদে না" .. নাঃ সেদিনও ছেলেটি কাঁদেনি ।
ছেলেটি শৈশব পেরিয়ে কিশোর হয়ে উঠল, প্রচন্ড ফুটবল খেলতে ভালোবাসত, বেশ নাম-ডাকও হলো, কিন্তু পড়াশুনোর জন্যে বাবা খেলা বন্ধ করালেন, "ফুটবল খেলে কি করবি? ভিক্ষে করবি? তার থেকে বড় কিছু হতে হবে থেকে, ডাক্তার,ইঞ্জিনিয়ার আরো কত কি! এসব বাওলামী ছেড়ে পড়াশুনোয় মন দে হারামজাদা! আজ থেকে খেলা বন্ধ তোর" .. সটান লাথি মারা ফুটবলটা যে কোথায় হারিয়েছিল কে জানে! নাহ! সেদিনও ছেলেটা কাঁদেনি ..
ছেলেটির ভূগোল পড়তে ভালো লাগত, পাহাড় পর্বত নদীনালা, নতুন শহর, ম্যাপ এসব নিয়ে ডুবে থাকত সে.. ইচ্ছে ছিল আর্টস নিয়ে পড়বে, কিন্তু বাবা বাঁধ সাধলেন, আর্টসে নাকি ভবিষ্যৎ নেই ..! সায়েন্স নিতে হবে, প্রচুর স্কোপ, ব্যস! ছেলেটি অনিচ্ছা স্বত্বেও নিজের স্বপ্ন , ভালো লাগাকে বিসর্জন দিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে সায়েন্স নিলো, নাঃ সেদিনও ছেলেটি কাঁদেনি ..
কলেজ ক্যাম্পাস .. ! গভীর কালো চোখের ইশারা, সব গোলমাল হয়ে গেল .. ! কলেজ বাঙ্ক, ঝালমুড়ি, হাতেহাত, সুবজ মাঠ, আবছা গোধূলি, কফিহাউস.... সব একদিন থমকে গেল! গভীর কালো চোখ ..অন্যকারো চোখের ইশারায় হারালো ..। ছেলেটি চারদিকে আধার দেখলো, নাহ! সেদিনও ছেলেটি কাঁদেনি .. ! ছোটবেলায় সে শিখেছিল "ছেলেদের নাকি কাঁদতে নেই"..
বাবা হঠাৎ অসুস্থ্য হয়ে পড়লেন, অক্ষম হলেন, ছেলেটি পড়াশুনোয় জলাঞ্জলি দিয়ে আর কতগুলো তাজা তাজা স্বপ্ন পুড়িয়ে একটি প্রাইভেট ফার্মে চাকরি করতে শুরু করল, নাঃ সেদিনও ছেলেটি কাঁদেনি ...
পুরো সংসারের বোঝা তার কাঁধে, অল্প মাইনে, ওভার টাইম, বসের চোখ রাঙানি, সকাল ৮.০৫ বনগাঁ লোকাল, বাদুড়ঝোলার শেষ ট্রেন . যান্ত্রিক জীবন আবদ্ধ বললো বাড়ি থেকে অফিস-অফিস থেকে বাড়ির বেড়াজালে ...নাঃ ছেলেটির সয়ে গেছিল সব, সেদিনও কাঁদেনি ...
মা শয্যাশায়ী হলেন, তাকে দেখভালের জন্যে "বউমা" খোঁজার তাগিদ বেড়ে চলল, ছেলেটি নির্বিকারে বিয়ের পিড়িতে বসে পড়ল, বিয়ে হল, মা তিনমাস পর পরলোক গমন করল, মায়ের আচল ধরে ঠাঁয় দিয়ে বসে রইল ছেলেটি, নাঃ ছেলেটি সেদিনও কাঁদেনি , ছেলেদের তো কাঁদতে নেই ...
দেখতে দেখতে বছর তিন-চারেক কাটল, যান্ত্রিক জীবনে একটু কোমলতা এলো, স্ত্রী সন্তানসম্ভবা হলেন ..
একদিন নার্সিংহোমে ছেলেটির একটি পুত্রসন্তান জন্মাল.. ছেলেটি বাইরে অপেক্ষা করছিল, নার্স ছেলেটিকে দেখানোর জন্য তার সদ্যজাত পুত্রকে নিয়ে এল ...
সেদিন সেই নবজাতক পুত্রকে কাঁপা কাঁপা হাতে কোলে নিয়ে ছেলেটি কেনো যে হাউহাউ করে কেঁদেছিল ..তার কারন জানা নেই ..
Monday 25 June 2018
ছেলেটি কিন্তু কাঁদেনি
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Popular Posts
-
অস্ট্রেলিয়া ► ফুটবল , লং টেনিস ও ক্রিকেট ইংল্যান্ড ► ক্রিকেট চিন ► টেবিল টেনিস , বাস্কেট বল, ফুটবল জাপান ► জুডো ও সুমো আমেরিকা ► বেসবল ...
-
অল্প চুদে লোন পাওয়া যায়। আসামের সমস্ত ব্যাংকে এরকম লেখা দেখে চমকে যেও না। বাংলা আর অসমীয়া হরফ আলাদা, ওটা আসলে 'সুদে' হবে। ওরা স কে ...
-
♥♥♥♥♥♥♥♥ বাবুর বউ বেড়াতে গেছে, নিজের বাপের বাড়ি, সারাদিন ঘুমায় বাবু, খেয়ে শুধু তাড়ি, ♥♥♥♥♥♥ এমন সময় ট্রিং ট্রিং, বাজলো কলিং বেল, পাশ...
-
একদা কোন এক সময়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাধ ঠাকুর, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম এবং কবি সামসুর রহমান বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন । আড্ডা দেওয়ার এক পর্...
-
Holiday List for West Bengal Government Employees, 2023 Governor is pleased to declare that the days as specified at List-III may be observe...
-
স্বামী-স্ত্রী রতিক্রিয়ার সময়– স্ত্রীঃ আজ আমায় কেমন লাগছে গো স্বামীঃ দারুন লাগছে ডার্লিং… ইচ্ছে করছে তোমার ভিতর চিরদিনের জন্য ঢুকে যাই। ব...
-
1. কোন রাজ্য তাদের নিজস্ব পতাকা তৈরির সিদ্ধান্ত নিলো?- কর্ণাটক 2. মাদাভুর বাসুদেবন নায়ার কোন নৃত্যশৈলীর সাথে যুক্ত ছিলেন?- কথাকলি 3. রোড...
No comments:
Post a Comment