Saturday, 21 December 2019

দেবদাস পারোর সত্য গল্প



স্বাদ বদলের পোস্ট
******************

দেবদাসের মৃত্যুর পর পার্বতীর কী হয়েছিল? দেব-পারোর সেই গ্রাম স্মৃতি আঁকড়ে রেখেছে আজও
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

ভালোবাসার পারোকে কথা দিয়েছিলেন দেবদাস। কথা ছিল, পারোর সঙ্গে ফের একবার দেখা হবেই তাঁর দেবদার। সেই প্রতিশ্রুতি রাখতেই মৃত্যু আসন্ন বুঝে কাশী যাওয়ার পথে ট্রেন থেকে নেমে পড়েছিলেন দেবদাস। গোরুর গাড়িতে চড়ে কোনওক্রমে পৌঁছন হাতিপোতা গ্রামে সেই বটগাছের তলায়। এই হাতিপোতা গ্রাম কোথায় জানেন কী? জানেন কী, দেবদাসের মৃত্যুর পর পার্বতীর কি হয়েছিল?

চুনিলালের সঙ্গে কাশী যাওয়ার সময় পান্ডুয়া স্টেশনে নেমে পড়েন দেবদাস। রাতের অন্ধকার। এবড়োখেবড়ো মাটির দীর্ঘ রাস্তা। যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম গোরুর গাড়িতে চড়ে অবশেষে দেবদাস পৌঁছলেন হাতিপোতা গ্রামে জমিদার ভুবনমোহন চৌধুরীর বাড়ির সামনে বটগাছের তলায়। জমিদার ভুবনমোহন চৌধুরীর দ্বিতীয় স্ত্রী পার্বতী। তৃষ্ণা মেটানোর মতো পানীয় জলটুকুও না পেয়ে জমিদার বাড়ির সামনে বটগাছের তলায় শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন দেবদাস।

অমর কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস লেখা হয়েছিল ঠিক একশ দুই বছর আগে ১৯১৭ সালে। আজও পূর্ব বর্ধমানের কালনার হাতিপোতা গ্রামে দেবদাস পার্বতীর সেই ভালবাসার আখ্যান বাসিন্দাদের মুখে মুখে ফেরে। জমিদারবাড়ি গঙ্গায় বিলীন হয়েছে আগেই। বেশ কয়েকবছর হলো বটগাছটিও মারা গিয়েছে। তবে জমিদার ভুবনমোহন চৌধুরীর কাছারি বাড়ির ছবি, জমিদারবাড়ির ইট, চাবি, দলিল দস্তাবেজ আগলে রেখেছেন গ্রামবাসীরা। দেবদাস পারোর প্রেম যে শুধুই গল্পকাহিনী নয়, তা যে জলজ্যান্ত সত্যকাহিনী তা গ্রামবাসীরা শুনেছেন বয়ঃজেষ্ঠ্যদের কাছে। এমনকি শরৎচন্দ্র যে এই গ্রামে এসেছিলেন সেই প্রমাণও আছে বিভিন্ন নথিতে। গ্রামবাসীদের বিশ্বাস, কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র কিছুটা কল্পনা মিশিয়ে নিজের প্রেমকাহিনীকে অমর করে রেখেছেন দেবদাস পার্বতীর গল্পের আড়ালে। গ্রামে শরৎচন্দ্রের মূর্তি বসেছে গ্রামবাসীদের উদ্যোগে। বর্তমান প্রজন্ম তৈরি করেছে দেবদাস স্মৃতি ক্লাব। সাহিত্য অনুরাগী অনেকেই উৎসাহ নিয়ে পৌঁছন হাতিপোতা গ্রামে। গ্রামবাসীরা তাদের ঘুরে দেখান পার্বতীর শ্বশুরবাড়ি স্মৃতিচিহ্ন, বটগাছের জায়গা, অতীতের খুঁটিনাটি। বাংলাদেশ থেকেও আসেন অনেকে।

বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের দাবি, দেবদাসের স্মৃতি বাঁচিয়ে রাখতে গ্রামে একটা সংগ্রহশালা হোক। তৈরি হক লাইব্রেরি। সেইসঙ্গে দূরদূরান্ত থেকে সপরিবারে আসা উৎসাহীদের জন্য হোক অতিথিনিবাস। দেবদাসের মৃত্যু সংবাদ পেয়ে পার্বতীর ‘দেবদা... দেবদা’ করে সেই আর্তনাদ, শেষ দেখাটা দেখতে পাওয়ার সেই আকুতি বাংলা সাহিত্যের পাঠকদের মনের গহনে সোনার ফ্রেম ও চোখের জলে বাঁধানো থাকবে চিরকাল। কিন্তু তারপর? পার্বতীর সেই প্রেমের কথা জমিদারবাড়ির বিশাল বন্ধ দরজা, উঁচু প্রাচীরে আটকা পড়েনি। সেখবর রাষ্ট্র হতে বাড়তি সময় লাগেনি। তারপর আর হাতিপোতা গ্রামে থাকেননি পার্বতী। ফিরে যান হুগলিতে বাপের বাড়ির গ্রামে। সেখানেই দেবদার সঙ্গে ছোটবেলার খুনসুটির স্মৃতি তর্পন করে কাটান বাকি জীবন। এ সত্য জানেন হাতিপোতার বর্তমান প্রজন্ম।

No comments:

Post a Comment

Popular Posts