Monday 1 October 2018

ভাগ্যবতী

সল্টলেক সেক্টর ফাইভের অফিস পাড়া,
খুব ব্যস্ত চারদিক..।
দুপুর ২.৩০ হবে.. রাস্তার পাশের চেনা দোকানে চা খাচ্ছি..
একটি মেয়ে, ২৩ কি ২৪ হবে বয়স..
দোকানে ইতস্তত করতে করতে ঢুকলো..
হাতে একটা transparent ফাইল..
ভিতরে কিছু মার্কশিট,সার্টিফিকেট এসব রয়েছে দেখা যাচ্ছে...
সারা শরীরে প্রসাধনের বিন্দুমাত্র চিহ্ন না
থাকলেও ঘাম আর রোদ মাখা মুখটা বেশ সপ্রতিভ...
দোকানদারের সাথে কিছু কথোপকথনের ছিটেফোঁটা..
মেয়ে- দাদা, এখানে ভাত বা রুটি কিছু পাওয়া যায়?
দোকানী- হ্যাঁ, ভাত পাবেন, বলুন কি খাবেন? ডিম,রুই মাছ,পাবদা মাছ,চারা পোনা, মাছের ডিম, মাংস?
মেয়ে- এমনি শুধু সব্জি ভাত কত দাদা?
দোকানী - ভাত,ডাল, সোয়াবিনের তরকারি, আলুভাজা.. ৩৫ টাকা।
মেয়ে - আমার সোয়াবিন চাই না, আমায় শুধু আলুভাজা আর ডাল দিন..
৩০ টাকায় হয়ে যাবে তো?
দোকানী - আচ্ছা বোন বোসো দিচ্ছি...
এরপর একটা ফোন আসে..
মেয়ে -
" হ্যাঁ মা বলো......
.......…...... হ্যাঁ...............হ্যাঁ ইন্টারভিউ দিয়েছি..... হ্যাঁ আরও কয়েকটা অফিসে যাব কথা বলতে,.................................
.......... হ্যাঁ খেয়েছি......ভাত মাছ.... তুমি ওষুধ গুলো খেয়েছ?..... হ্যা আমি ৫ টার ট্রেনটা ধরবো... আচ্ছা ভাইকে টিউশান থেকে ফেরার সময় স্টেশনে দাঁড়াতে বলবে......আচ্ছা রাখো...হুম..।"
ফোনটা রেখে কয়েকটা সেকেন্ড বাইরের দিকে আনমনে হয়ে তাকিয়ে ছিলো..... হয়তো অসুস্থ মা.. পড়ুয়া ছোট ভাইয়ের সুদিন এনে দেওয়ার সাজানো দিনের ছবি গুলো চোখে ভিড় করেছিলো...
কিরকম যেন একটা শ্রদ্ধা শ্রদ্ধা এলো... একটা অজানা অচেনা মেয়ের জন্য..
কি যেন বলে এই বয়স টাকে... বালিকার চেয়ে বড়ো.. যুবতীর চেয়ে ছোট।
নারী স্বাধীনতার কি??
ওর কাছ থেকে একবার শুনতে খুব ইচ্ছে করছিলো....
একটা মনে মনে শুভকামনা জানালাম..
এই চাকরির আকালের যুগে তুমি যে বাইরে এসে আগুন রোদের তলায়.. শক্ত মাটিতে নেমে এসেছ যুদ্ধের জন্য,
এখানেই তুমি যুদ্ধটা অর্ধেক জিতেছো..
আর অর্ধেক নিজের চাকরির টাকায় সত্যি সত্যি মাছ ভাত খাওয়ার পর জিতবে....
এ পর্যন্ত ঘটনাটা হয়তো সাধারন ছিলো..
যদিও "মেয়ে" তুমি মন জিতে নিলে..
কিন্তু ঘটনাটা আরও বাকী..
দোকানী..ভাতের থালাটা সাজিয়ে..
মেয়েটির সামনে রেখে বললো..
দোকানী -
বোন আমি ভুল করে সোয়াবিনটা দিয়ে ফেলেছি, তুমি খেয়ে নাও প্লিজ.........
ওই তিরিশ টাকাই দিও।
মেয়ে -কিন্তু আমি তো শুধু আলুইভাজাই....
দোকানী -
আমি একদম ভুলে তরকারিটা দিয়ে ফেলেছি.. তুমি প্লিজ খেয়ে নাও.. তিরিশ টাকায় নেবো আমি...আমার ভুল..
তুমি না খেলে এতোটা খাবার নষ্ট হবে আমার..
আপনাদের মতো আমিও ভেবেছিলাম নিছকই ভুল...
কিন্তু চেনা দোকানী.. কানের কাছে এসে বললো..
"শুধু ব্যাবসায় লাভ খুঁজলে হবে দাদা... এরকম ভুল গুলো করার সুযোগ ও খুঁজতে হবে... ওর খুব খিদে পেয়েছে..
বনগাঁ তে আমারও বোনটার বয়স এরকমই..."
বলে আবার নির্লিপ্ত মুখে.
চা.. সিগারেটে, ভাত, তরকারির রাজ্যে হারিয়ে যায়।
আমি খুঁজে পেলাম না... কার জন্য বেশী
ভালো লাগা উচিৎ..
হয়তো একটা লাইন লেখা যেতে পারে..
যে যুদ্ধ জিনিসটা বোঝে, সে ই যোদ্ধার রক্ত, ঘাম, ক্ষিদের মূল্য দিতে জানে.....
আরেকটা কথা...
বনগাঁর বোনকে সল্টলেকে দিব্যি অচেনা একজনের মধ্যে খুঁজে আপ্যায়ন করে নেয় যার দাদা..
সেই বোন খুব ভাগ্যবতী...

No comments:

Post a Comment

Popular Posts