Tuesday 29 October 2019

পিনড্রপ সাইলেন্স



পিনড্রপ সাইলেন্স (সম্পূর্ণ/চরম নিস্তব্ধতা) মানে কি? চলুন, নিচের ঘটনাগুলি পড়া যাক। প্রতিক্ষেত্রেই নীরবতা শব্দের থেকে বেশি বাঙময়।
ঘটনা ১
-----------
ফিল্ড মার্শাল স্যাম বাহাদুর মানেকশ একবার গুজরাটের আহমেদাবাদে এক জনসভায় ইংরাজিতে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন। জনতা দাবি তুললো গুজরাটিতে বক্তৃতা দেওয়া হোক, তবেই তারা শুনবে।
মানেকশ জনতার দিকে কঠোর দৃষ্টিতে একবার তাকিয়ে নিয়ে বলতে শুরু করলেন।
"আমি আমার দীর্ঘ জীবনে অনেক যুদ্ধ লড়েছি।
শিখ রেজিমেন্টের কাছে পাঞ্জাবি শিখেছি। 
মারাঠা রেজিমেন্টের কাছে মারাঠি শিখেছি। 
তামিল শিখেছি তামিল সৈন্যদের কাছ থেকে। 
বাংলা শিখেছি বাঙালি সৈন্যদের কাছ থেকে।
বিহার রেজিমেন্ট আমাকে হিন্দি শিখতে সাহায্য করেছে। 
এমনকি গুরখা রেজিমেন্টের কাছে নেপালিও শিখেছি।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে কোনও গুজরাটি সৈন্যের সাথে আমার এজীবনে পরিচয় হয়নি যার কাছে আমি গুজরাটি শিখতে পারি।"
জনতার মাঝে নেমে এলো পিনড্রপ সাইলেন্স!
ঘটনা ২
-----------
Robert Whiting, একজন ৮৩ বছর বয়সী আমেরিকান নাগরিক প্লেনে করে প্যারিস এয়ারপোর্ট পৌঁছলেন। বয়স হওয়ার দরুন তিনি কাস্টমস কাউন্টারে নিজের পাসপোর্টটি খুঁজতে একটু বেশি সময় নিচ্ছিলেন।
"আপনি কি আগে কখনও ফ্রান্সে এসেছেন?" তরুণ কাস্টমস অফিসার জিজ্ঞেস করলেন।
"হ্যাঁ, এসেছি।" Whiting উত্তর দিলেন।
"তাহলে এখানে যে নিজের পাসপোর্ট দেখানোর জন্য আগে থেকেই বার করে রাখতে হবে, সে জ্ঞান আপনার থাকা উচিত।" কাস্টমস অফিসার উপহাস করলেন।
"আগের বার যখন এসেছিলাম, পাসপোর্ট দেখাতে হয়নি।"
"অসম্ভব! আমেরিকানরা যখনই ফ্রান্সে আসে, তাদের পাসপোর্ট দেখাতেই হয়।"
আমেরিকান ভদ্রলোক দীর্ঘ সময় তরুণ কাস্টমস অফিসারের দিকে তাকিয়ে থেকে বলতে শুরু করলেন-
"ওয়েল, আমি যখন ১৯৪৪ সালের ৬ই জুন (D-Day) ভোর ৪:৪০এ মিত্রপক্ষের অন্যান্য সৈন্যদের সঙ্গে Omaha বীচে এসে নেমেছিলাম তোমাদের দেশকে স্বাধীন করার এবং হিটলারকে পরাজিত করার উদ্দেশ্যে, তখন কিন্তু সেখানে একজন ফরাসীকেও আমাদের পাসপোর্ট পরীক্ষা করার জন্য উপস্থিত থাকতে দেখিনি।"
সমগ্র ফরাসী পাসপোর্ট অফিসে নেমে এলো পিনড্রপ সাইলেন্স! 
ঘটনা ৩
-----------
১৯৪৭ সাল। আমাদের দেশ তখন সদ্য স্বাধীন হয়েছে। জওহরলাল নেহরু সাময়িকভাবে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। সেইসময় একদিন এক বৈঠক ডাকা হলো ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রথম সর্বাধিনায়ক (Commnder-in-Chief) নিয়োগ করার উদ্দেশ্যে। সেই বৈঠকে নেহরু প্রস্তাব রাখলেন যে একজন ব্রিটিশ অফিসারকেই এই পদ দেওয়া উচিত কারণ আধুনিক যুদ্ধের ও সেনাবাহিনীকে নেতৃত্ব দেওয়ার ব্যাপারে আমাদের কারোর কোনও অভিজ্ঞতা নেই।
বৈঠকে উপস্থিত সমস্ত সদস্যের মুখে কোনও কথা নেই। সবাই ব্রিটিশ শাসন ও ব্রিটিশ শিক্ষায় অভ্যস্ত। সেবা করতে জানেন কিন্তু নেতৃত্ব দিতে জানেন না।
কিছুক্ষণ পরে সেনাবাহিনীর এক অভিজ্ঞ অফিসার নাথু সিং রাঠোর কিছু বলার অনুমতি চাইলেন। নেহরু বিস্মিত হলেও তাঁকে অনুমতি দিলেন।
রাঠোর নেহরুকে বললেন "হ্যাঁ, আপনার কথাই ঠিক। একইভাবে যেহেতু আমাদের দেশ চালানোর কোনও অভিজ্ঞতা নেই, সুতরাং দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রীও একজন ব্রিটিশ হওয়া উচিত।"
বৈঠকে নেমে এলো পিনড্রপ সাইলেন্স!
অনেকক্ষন পর নেহরু নীরবতা ভাঙলেন।
"অফিসার রাঠোর, আপনি কী ভারতীয় সেনাবাহিনীর দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত?" নেহরুর প্রশ্ন।
"আমার মনে হয় জেনারেল কারিয়াপ্পা এই পদের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত।" রাঠোরের জবাব।
এইভাবেই ফিল্ড মার্শাল কারিয়াপ্পা স্বাধীন ভারতের সেনাবাহিনীর প্রথম সর্বাধিনায়ক হয়েছিলেন আর নাথু সিং রাঠোর প্রথম লেফটেন্যান্ট জেনারেল।

No comments:

Post a Comment

Popular Posts