-"মা, চারটে বেজে গেছে। তুমি রেডি তো ?"
গাড়ির চাবিটা নিতে নিতে বললো রোহিত।
-"হ্যাঁ। দাঁড়া, জুতোটা পড়ি।"
বৌমা সুস্মিতা এসে সামনে দাঁড়ালো। মুখে হাসি। বললো-"সাবধানে নিয়ে যেও মাকে।'' ....
হাসলেন নিরুপমা। এখনো চিন্তা করে বৌমা! ওকে তো কখনো ভালোবাসতে কার্পণ্য করেননি উনি! তবু শেষে ওনার ঠিকানা হবে বৃদ্ধাশ্রম! ভালোই হয়েছে রোহিতের বাবা আর নেই। থাকলে এত বড় ধাক্কা নিতে পারতেন না উনি।
...
ছোট্ট রোহিত কত বায়না করতো। সব মেটাতে পারতেন না নিরুপমা। মা হয়ে খুব খারাপ লাগতো। তবু ধৈর্য হারাননি। প্রাণপণে স্বামীর ব্যবসায় সঙ্গে থেকেছেন। রোহিতকে বড় করেছেন। রোহিত আজ কত বড় চাকরি করে! তখন বাড়ি ছিলো একতলা। দু'টো বেডরুম, কিচেন আর বাথরুম। সেই বাড়ি এখন আর চেনা যায় না। রোহিতের বাবাই দোতলাটা করে ফেলেছিলেন, রোহিত সেটাকে সুন্দর করে সাজিয়েছে। দামী দামী আসবাব, সাজানোর জিনিস, মেঝেতে দামী মার্বেল। কী সুন্দর ছিলো সবকিছু। রোহিতের বিয়ে দিয়েছিলেন কত ধুমধাম করে। মেয়ে অবশ্য রোহিতের আগেই পছন্দ ছিলো! সুস্মিতাকে একবার দেখেই ভীষণ পছন্দ হয়ে গিয়েছিলো নিরুপমার। হবে নাই বা কেন! ক'জন মেয়ে আছে সুস্মিতার মতো! নিজের মেয়ের মতো আপন করে নিয়েছিলেন সুস্মিতাকে। হয়তো এত সুন্দরের মাঝে উনি নিজেই বেমানান। চারদিকে এত নতুনের ভীর, এত ঔজ্জ্বল্য, হয়তো উনি নিজে এসবের সঙ্গে একদমই খাপ খান না বলে এই ডিসিশন!
.
.
পরশুদিন খাবার টেবিলে প্রথম বৃদ্ধাশ্রমের কথাটা ওঠে। ছেলে প্রথমে বলতে পারেনি, সুস্মিতাই বললো-"মাকে যেটা বলবে বলছিলে বলো!"
খাওয়া থামিয়ে মুখ তুলে ছেলের দিকে তাকিয়েছিলেন নিরুপমা।
-"মা, একটা বৃদ্ধাশ্রম নতুন বানানো হয়েছে, ঘরদোর ঠিকঠাক, সিকিউরিটিও ভালো। তুমি যদি একবার দেখে আসতে তো খুব ভালো হতো!"-
মাথা নিচু করে খেতে খেতেই বলেছিলো রোহিত। নিরুপমার পৃথিবীটা হঠাৎ অন্ধকার হয়ে গেছিলো। এতদিনের চেনা বাড়ি, গোছানো সংসার, ছেলে- বৌমা সব ছেড়ে বেড়িয়ে যেতে হবে! চোখ ফেটে জল আসতে চাইছিলো, তবু কাঁদেননি নিরুপমা। বরাবর মাথা উঁচু করে বেঁচেছেন। যতদিন বাঁচবেন কারো কাছে কিছু চাইবেন না, ছেলের কাছেও না। তবে এখন ক'টাদিন উনি থাকলে ভালো হতো। সুস্মিতা আর ক'দিন পরে মা হবে। উনিই দেখাশোনা করছেন। যাই হোক, ও মায়ের কাছে চলে যাবে বোধহয়। হয়তো নতুন প্রাণের গায়ে পুরোনোর আঁচর লাগতে দিতে চায়না বলেই রোহিতের এই ডিসিশন।
.
.
সেদিন রাতে খেয়ে যাওয়ার পর টুকটাক কথা শুনতে পাচ্ছিলেন ছেলে বৌমার। সুস্মিতা কী যেন বলছিলো জায়গা জায়গা করে । রোহিতের মুখ থেকে 'যে আসছে' কথাটাও শোনা গেল বার দু'য়েক। ছোট একটা বাচ্চার এত বড় বাড়িতে জায়গা করে দিতে নিরুপমাকে বাড়ি ছেড়ে যেতে হবে! তাই হোক তবে!
.
.
গাড়ি থেকে নামতে নামতেই ভেতরটা দেখা গেল। শহর ছাড়িয়ে শান্ত জায়গায় অনেকটা জায়গা নিয়ে ছোটো ছোটো তিনটে বাড়ি। আরো কাজ চলছে। সামনে পেছনে বাগান করা চলছে। পেছনে যতদূর চোখ যায় মাঠ। বুক ভরে নিশ্বাস নিলেন নিরূপমা। আঃ! সেই ছোটবেলার স্বাদ। সংসারের চাপে কবে যে বুক ভরে নিশ্বাস নিতে ভুলে গেছিলেন বুঝতেই পারেননি।
-"এসো মা!"- সামনে এগোতে এগোতে বললো রোহিত।
ছেলের পিছু পিছু বাইরের গেটের সামনে এলেন নিরুপমা। গেটটা বেশ উঁচু। বড় বড় করে লেখা-'নিরুপমা বৃদ্ধাশ্রম '।
ওনার নামেই নাম ? হঠাৎ বিদ্যুৎঝলকের মতো পুরোনো কিছু স্মৃতি মনে পড়ে গেল নিরুপমার। রোহিতের বাবার খুব ইচ্ছে ছিলো একটা ওল্ড এজ হোম বানানোর। নিজের বাবা মাকে খুব ছোটবেলায় হারিয়েছিলেন উনি। খুব করে চাইতেন কেউ বাবার মতো আগলে রাখুক, মায়ের মতো শাসন করুক। হয়ে ওঠেনি। নিজে যা পাননি অন্যেরা তা পেয়েও যখন অবহেলা করতো তখন কষ্ট পেতেন খুব। কতদিন বলেছেন-"অবস্থাটা ফিরুক। আমি ঠিক একটা সুন্দর বৃদ্ধাশ্রম বানাবো যেখানে শেষ জীবনটা খুব শান্তিতে কাটানো যায়।"
ততটা সময় পাননি উনি। তবে কি...হঠাৎ নিরুপমার চোখ জ্বালা করে জলে ভরে এল। ততক্ষণে ভেতরের অল্প কিছু সমবয়সী মানুষজন নিরুপমাকে দেখার জন্য ভীর জমিয়েছেন। সবার হাতেই কিছু না কিছু উপহার।
-"হ্যাপি বার্থডে মা! "- হাতে একগোছা ফুল নিয়ে মায়ের দিকে বাড়িয়ে দিল রোহিত। সঙ্গে সঙ্গে সবাই মিলে চেঁচিয়ে উঠলো-"হ্যাপিইইই বার্থডে-এ-এ!!!"
সত্যিই তো! মনেই ছিলো না একদম। ইস! ছি ছি! কত খারাপ ভাবছিলেন শুধু শুধু।
-"তুমি খুশি তো মা ?"
-"খুব খুশি! খুব!"- রোহিতের হাতটা ধরতে ধরতে বললেন নিরুপমা-"এত সুন্দর গিফট কোনো ছেলে কখনো কোনো মাকে দিতে পারেনি।"
ট্যাক্সি থেকে নামছে সুস্মিতা। আস্তে আস্তে হেঁটে এসে বললো-"তোমাকে সব সাজিয়ে গুছিয়ে নিতে হবে কিন্তু। এখন আমি বারবার এখানে আসতে পারবো না।"
-"মাকে উইকএণ্ডে একবার করে নিয়ে আসবো। মা দেখাশোনা করবে। কাজকর্মের জন্য তো এখানে আছে অনেকে।"- রোহিত বললো।
সুস্মিতাকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন নিরুপমা। মাঠের শেষে তখন লাল আলো ছড়িয়ে সূর্য অস্ত যাচ্ছে। লালচে সোনার রঙে ভেঙে ভেঙে ছড়িয়ে পড়ছে খুশি !!!
Monday, 6 May 2019
অভিনব বৃদ্ধাশ্রম !!
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Popular Posts
-
আজ সকালে সোফায় বসে হঠাৎ আধ্যাত্মিক ভাবনা এল। চোখ বন্ধ করে ভাবতে বসলাম আমি কে? কোথা থেকে এলাম? কেন এলাম? কোথায় যাবো? ঠিক তখনই রান্নাঘর থেকে...
-
স্বামী-স্ত্রী SEX করছিল... ঠাপ মারতে মারতে স্বামী হঠাৎ থেমে গেল ৫ মিনিট পর আবার ঠাপ মারা শুরু করল কিছুক্ষণ পর আবার থেমে গেল এরকম ৭-৮ বার...
-
Holiday List for West Bengal Government Employees, 2023 Governor is pleased to declare that the days as specified at List-III may be observe...
-
শিবরাম চক্রবর্তী একবার গামছা পরে জল তুলছেন এমন সময় এক ভদ্র মহিলা এসে বললেন "আপনি এত বড় বংশের ছেলে, আপনার বাবা এত বড় লোক, আপনি কি না...
-
এক বাইকার স্বামী থানায় গেছে অভিযোগ জানাতে। স্বামীঃ আমার বউ হারিয়ে গেছে, সে গতকাল শপিংয়ে বেরিয়ে এখনো ফেরেনি। অফিসারঃ বয়স? স্বামীঃ নিশ্চিত নই,...
-
-- "হ্যালো আপনি কি মিস্টার তলাপাত্র বলছেন?" -- "হ্যাঁ। কেন বলুন তো?" -- "আপনার ডেবিট কার্ডের ব্যাপারে কিছু তথ্য চ...
-
স্বাদ বদলের পোস্ট ****************** দেবদাসের মৃত্যুর পর পার্বতীর কী হয়েছিল? দেব-পারোর সেই গ্রাম স্মৃতি আঁকড়ে রেখেছে আজও ~~~...
No comments:
Post a Comment